চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রেহাইচর গ্রামের বীরাঙ্গনা রহিমা বেগমের ৭৮ শতক ভিটামাটি ও ২৪ বিঘা জমি মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দখল করে খাচ্ছে রাজাকার নজরুলসহ অন্যরা।বিভিন্ন আইনী জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে এবং রাজাকারদের দাপটে জীবিত থাকাবস্থায় বীরাঙ্গনা আগে সেই জমি উদ্ধার করতে পারেননি। বীরাঙ্গনা মৃত্যুর আগে রাজাকারদের বিচার দেখে যেতে চাইলেও তাও তার দেখা হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজাকার নজরুল ও তার দলবলের হাত হতে সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছে তার ছেলে ও মেয়েরা। সোমবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এ সংবাদ সম্মেলন করেন বীরাঙ্গনা রহিমার ছেলে লোকমান আলী (৬৪)।
লিখিত বক্তব্যে লোকমান আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল মালেক জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবাদি রাজাকারদের সহায়তায় পাক বাহিনী তার দাদী বীরাঙ্গনা রহিমা বেগম ও দাদাকে ধরে নিয়ে যায়। বাহিনী। এসময় বীরাঙ্গনা রহিমা বেগমের বাড়িতে লুটপাট করে রাজাকাররা। সেই সময় বাড়িসহ সকল সম্পত্তির দলিল তারা নিয়ে যায়।সেসময় তার দাদাকে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী এবং ধরে নিয়ে যাবার তিনদিন পর বীরাঙ্গনা রহিমা বেগম বাড়িতে ফিরে আসেন। সে তিনদিনে রহিমা বেগমের উপর নানা রকম মানষিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায় পাক বাহিনী ও রাজাকাররা। সাত সন্তানের জননী রহিমা খাতুন পরবর্তীতে রাজাকার নজরুল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন মামলা বা বিচার চাওয়ার সাহস পাননি। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালে নজরুলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে রাজাকারদের বিচার চেয়ে একটি মামলা করেন। কিন্তু সেখানেও হেরে যান বীরাঙ্গনা রহিমা বেগম। রাজাকারদের বিচার না দেখেই বীরাঙ্গনা মৃত্যুবরন করেন। পরে রাজাকারদের বিচার চেয়ে ও তাদের হাত হতে সম্পত্তি উদ্ধার লক্ষে লড়াই শুরু করে বীরাঙ্গনার ছেলে মেয়েরা।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়- বীরাঙ্গনা রহিমা বেগমের সম্পত্তি দখল করে ভোগকারী হলো- মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ নেজাম উদ্দীন, মোঃ আলম, মোঃ রেজাউল, মোঃ এনামুল, মোঃ আবুল হোসেন, রুমালী বেগম, মোঃ রাজ্জাক, মোঃ রমজান, মোঃ রজব, মোসাঃ পারুল, মোসাঃ আকলিমা খাতুন, মোঃ বাশির, মোঃ বাদল, মোঃ কুরবান, মোসাঃ সেফালী খাতুন, মোঃ তরিকুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল বাসেদ, মোঃ লতিফুর রহমান লূকু, মোঃ মোকবুল হোসেন ফুকা।
বক্তব্যে মালেক জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, থানা, আদালত ঘুরে ঘুরে তারা আজ সর্বশান্ত। রাজাকারদের বিচার দেখে যেতে পারেননি বীরাঙ্গনা রহিমা বেগম। তাই জমি উদ্ধার ও রাজাকারদের দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবিতে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করলেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে, বীরাঙ্গনা রহিমা বেগমের শেষ ইচ্ছা রাজাকারদের বিচার চাই তার সন্তানেরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বীরাঙ্গনা রহিমা বেগমের ছেলে বাদী লোকমান আলী, অপর ছেলে শফিকুল ইসলাম, মেয়ে শাবানা বেগম গুধি ও গুল চেহেরী, ছেলের বউ তোহমিনা ও সাবিনাসহ ছেলে-মেয়েদের সন্তানগণ এবং জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।