অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই মিলছে ই-পাসপোর্ট। প্রযুক্তির সহায়তায় করোনা মহামারির মধ্যেও বেড়েছে সেবা কার্যক্রম। এখন দিনে প্রায় ছয় হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরি হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই দিনে ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের বেশির ভাগ পাসপোর্টধারীর হাতেই ই-পাসপোর্ট তুলে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলছে। এরই মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। এসব গেট ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে নিপুণভাবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন ই-পাসপোর্টধারীরা।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট অ্যান্ড অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে করোনা মহামারির মধ্যে অফিস বন্ধ থাকলেও বসে থাকেননি ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের কর্মীরা। অফিস বন্ধ থাকলেও মে মাস থেকেই প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ শুরু করে দেন তাঁরা। ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৭০টি পাসপোর্ট অফিসে প্রযুক্তি সংস্থাপনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর পার্বত্য তিন জেলা, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও চাঁদপুর ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে।
ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত এক লাখ ৭৭ হাজার ই-পাসপোর্ট হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ ইস্যু হওয়ার পর সেবাপ্রার্থীদের হাতে পৌঁছে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ আবেদন পাওয়া গেছে। বাকি ৫০-৬০ হাজার প্রক্রিয়াধীন। অবশ্য ছোট-বড় নানামুখী ভুলের কারণে সব সময়ই ১০-১২ হাজার এই প্রক্রিয়াধীন পর্যায়ে থাকে।’
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে দিনে প্রায় ছয় হাজার পাসপোর্ট তৈরি হলেও ২৫ হাজার পাসপোর্ট দেওয়ার সক্ষমতা আছে আমাদের। পুরোদমে কার্যক্রম চালু হলে আমরা এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যাব। এখন ৭০টি অফিস থেকে ই-পাসপোর্টের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিদেশের ৮০টি মিশনে দেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে।’
সাঈদুর রহমান খান জানান, ই-পাসপোর্টে ছাপানোর জন্য বিশেষ ধরনের বুকলেট বিদেশ থেকেই আনা হচ্ছিল। ২০ লাখ বুকলেট দিয়ে এখন কাজ চলছে। তবে জানুয়ারি থেকে নিজস্ব কারখানায় স্থাপন করা প্রযুক্তিতে এখানেই বুকলেট তৈরি করবে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। আর অত্যাধুনিকই জার্মান প্রযুক্তিতে এই পাসপোর্ট তৈরি ও রিডিং হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির কারণে সমান মর্যাদা পাওয়া যাবে, ভুয়া পাসপোর্ট বলে সন্দেহ দূর হবে; ভিসা পাওয়াও সহজ হবে। একই সঙ্গে অনঅ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে।
প্রস্তুত ই-গেট : ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপনের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫টি গেট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ডিপারচার, বাকি তিনটি অ্যারাইভাল ই-গেট। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এগুলো চালু করা হবে। তবে ই-গেটের পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এমআরপি পাসপোর্টের ইমিগ্রেশনও চলবে। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোতেও দুটি পদ্ধতিই চালু আছে। পর্যায়ক্রমে সব আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরেই ই-গেট স্থাপন করা হবে বলে জানান সাঈদুর রহমান খান।
গত ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট দেওয়ার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।