Mar 15, 2022

তবুও সুখী মর্জিনা খালা





ষাটোর্ধ্ব একজন মর্জিমা খালা। রেল স্টেশনের বস্তির বাসিন্দা তিনি। রেলস্টেশন পাড়াতে বসায় ঝালের আসর। ঝালের সাথে থাকে কালাইয়ের রুটি। দূর-দুরান্ত থেকে ঝালের সাথে কালাইয়ের রুটি খেতে আসেন অনেক জন।

একদিন রাতে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে রুটি বানাতে দেখা যায়। গাছ তলায় দুটো বেঞ্চে বসে ছিল কয়েকজন ঝাল প্রেমি মানুষ। মানুষগুলোও বেশ মচমচ করে খাচ্ছিল কালাইয়ের রুটি আর লবণ ও মরিচ বাটার ঝাল।

তীব্র শীতের রাতে রুটি বানানোর কারণ জানতে চাইলে মর্জিনা খালা বলেন, প্রায় ২০ বছর পূর্বে  স্বামী তোসলিম হোসেনকে হারাই। পরে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছিলাম। বাড়িতে কামাই করার মতোন আর কেউ নাই। তখন রাতে রুটি বানাই। আর বিক্রি করি। এখান থেকে যা টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়েই সংসার চালাই। 

বাড়িতে ছেলে মেয়ে আছে কিনা জানতে চাইলে মর্জিনা খালা প্রশ্নোত্তরে বলেন,  দুই ছেলে আর এক মেয়ে আছে আমার। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শুশুর বাড়িতে থাকে। আর দুটা ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সালেক প্রতিবন্ধী। আর ছোট ছেলে রাজু বেকার বললেই চলে। আমার ছোট ছেলেটা কখন রিক্সা চালায়, কখনও বারো ভাজা, বাদাম বিক্রি করে। কিন্তু তার এখন আর বেচা বিক্রি নাই। সব মিলিয়ে আমাকেই সংসার চালাতে হয়। ছোট ছেলে ব্যবসার জন্য কিস্তি তুলেছিলো। ওর এখন বেচা বিক্রি না থাকায় রুটি বেচেই তার কিস্তির টাকা শোধ করি।

মর্জিনা খালা আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ফুটপাতে দুটা রুটি বেচেই খাই। যেখানে এখন বাস করছি জামিটা রেলের। হয়তো সেখানকার বাড়িগুলো রেলের লোকজন উঠিয়ে দিবে। কিন্তু থাকার জায়গা তো নাই। কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো। এ ভেবেই দিন পার করছি। আশপাশে কোন সরকারি ঘর পেলে সেখানে উঠবো। আর এখানে এসে রুটি বিক্রি করবো। তাহলে সংসারটা চালাতে পারবো।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা ফাইজুর রহমান মানি। তিনি একটি রুটি খেয়ে খালাকে আরেকটি রুটির অর্ডার দেন। খালার বানানো রুটি খেতে কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসর পেলেই এখানে রুটি খেতে আসি। রুটির দাম ২০ টাকা হলেও স্বাদটা অনেক। বিশেষ করে লবণ আর মরিচ বেটে তিনি যে ঝালটা বানান তা কিন্তু বেশ স্বাদের। 

ওহেদুজ্জামান নামের একজন জানান, জেলা শহরের মধ্যে সব জায়গার কালাইয়ের রুটির স্বাদ নেয়া আছে। কিন্তু মর্জিনা খালার বানানো রুটি আর ঝাল বেশ মজাদার। তিনি রাতে রুটি বানান। সারাদিন কাজ শেষ করে প্রায় সম এখানে চলে আসি রুটি আর ঝাল খেতে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com