দিন আনে দিন খায় যারাঃ রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, ইজি বাইক চালক,কুলি,কামার,কুমার,মুচি,নাপিত। এরা সাধারণত দিন এনে দিন খায়।
রিক্সা চালকঃ জেলা শহরের বিশ্বরোডে দেখা মিলে রিক্সা চালক তৈমুরের। কথা বলছিলো প্রতিবেদকের সাথে; তিনি জানান; আমার দিন ভালো চলছে না। সকাল বেলায় বের হতে পারিনা রিক্সা নিয়ে। সন্ধার পর বের হই বাড়ি থেকে। এক মালিকের রিক্সা চালাই; আজ ৩০০ টাকা আয় হয়েছে। তার মধ্য থেকে মালিককে দিতে হয় ১৫০ টাকা। চার্জার খরচ ৫০টাকা। কি রাখবো আর কী খাবো। রাস্তাতা তো লকজন নাই। কাকে নিয়ে যাবো কার গন্তব্য স্থলে।
অটো চালকঃ ব্যাটারী চালিত অটো চালক জামাল হোসেন। দেখা হয় প্রতিবেদকের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বটতলা হাটে। তিনি জানান; বাবা মাকে দিয়ে আমি সংসার চালাই। দিন আনি; দিন খাই। বাড়িতে পোষা একটি মাত্র ছাগল। সেটাও বিক্রি করতে এসেছি হাটে। যাতে করে সংসারটা ঠিক মতো চালাতে পারি। কে রাখবে আমাদের খোঁজ।
ভ্যান চালকঃ আসগর আলী একজন পেশায় ভ্যান চালক। বাড়ি তার বারোঘরিয়ায়। মনটা ভার করে বসে ছিলো শান্তিমোড়ে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো যদি কেউ আসে। কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে।তিনি জানান, লক ডাউনের ৪ দিন পর বাধ্য হয়ে বের হয়েছি। বাড়িতে দেড় কেজি চাল আর ৩-৪ টা আলু ছাড়া কিছুই নাই। এখানে দেড় ঘন্টা ধরে বসে আছি কোন লকজন নাই। এখনও অবধি কেউ সাহায্য করেনি।
কুলিঃ রেল স্টেশনগুলিতে তাদের ভারী ভারী মালপত্র নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক মানুষ থাকেন। আগে তাঁদের কুলি বলা হত।শহরে রেলস্টেশন এলাকার আঃ করিম।পেশায় সে একজন কুলি।তিনি জানান, সকল ট্রেন বন্ধ।আমার কোন কাজ নাই। একেবারে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি করোনা কালে।গত বারেরে করোনার ধাক্কা সারিয়ে উঠতে পারিনি।ফের সরকার লক ডাউন দিয়েছে।গতবার কয়েকবার সাহায্য পেয়েছিলাম এবার সেটাও নাই।
কামারঃ কামার একটি প্রাচীন পেশা যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। মূলত হিন্দু ধর্মের জনগোষ্ঠী এই পেশায় জড়িত। একসময় গৃহস্থালি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ লৌহযাত যন্ত্রপাতি কামাররা প্রস্তুত করতেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দা, বটি, পেরেক, শাবল, কুড়াল, ছুরি ইত্যাদি।বারোঘরিয়ার পুলপাড়া এলাকার রণজিৎ বসু। পেশায় সে একজন কামার। মুলত তার কাজ হচ্ছে দা,বটি,হাসুঁয়া এসব তৈজসপত্র গুলো বানানো। তারও কোন কাজ নেই। বাড়িতে সময় কাটে তার।আফসোস করে বলে কেউ তার খোঁজ রাখেনি।
মুচিঃ জুতা তৈরি এবং জুতা মেরামতের কাজ করেন। ত্রুটিযুক্ত বা পুরানো জুতা-সেন্ডেল মেরামত করে রং মাখিয়ে চাকচিক্য সৃষ্টি করাও এদের কাজ।বিশ্ব রোডে দেখা মিলতো মুচি নিতাইয়ের সাথে।তিনি জানান, কে রাখে কার খোঁজ।এখন তো লক ডাউন রাস্তায় কোন লোকজন নাই।দিন কষ্টেই যাচ্ছে। কেউতো আর খোঁজ রাখবেনা।নিজের ভালো থাকা নিজেকে থাকতে হবে।
নাপিতঃ নাপিত বা নরসুন্দর এমন এক শ্রেণীর পেশাজীবি যারা বিভিন্ন ধরনের বা রকম ভাবে মানুষের চুল ছাঁটেন এবং দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে থাকেন। নাপিতরা যেখানে চুল ছাঁটেন তাকে সাধারণ বার্বার সপ বা হেয়ার সেলুন অথবা শুধু সেলুনও বলা হয়ে থাকে।শান্তি মোড়ের এক নাপিত। তিনি জানান, আমরা তো সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ।আমাদের আর কষ্ট কে বোঝবে।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, রাজনৈনিত ব্যক্তিরা সব সময় জনসেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।সুতরাং এ করোনা কালে যেন তারা গরিব ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাড়ায়।
