Apr 4, 2021

কাঁচা আমের সাথে লবন মরিচের সম্পর্ক


গ্রীষ্মকাল মানেই আমের মৌসুম। কাঁচা আম দেখলেই সবার জিভে জল চলে আসে। আচার থেকে শুরু করে মজাদার অনেক পদ তৈরি করা যায় কাঁচা আম দিয়ে। বিশেষ করে আম যখন বড় হওয়া শুরু করে তখন প্রথমে লবণ মরিচ দিয়ে আম খাওযার কথা মনে পড়ে। কাঁচা আম যখন লবণ, মরিচ, সরিষা দিয়ে মাখানো হয়; তখন এর স্বাদ সবাইকে মুগ্ধ করে দেয়।

এ নিয়ে কথা হচ্ছিলো শিবঞ্জের বাসিন্দা ফাতেমার সাথে। তিনি জানান, সাধারণত মেয়েরা একটু টক খেতে পছন্দ করে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ তো আমের রাজধানী। এ এলাকাতে আমের অভাব নেই। ছোট বেলার একগুচ্ছ স্মৃতি খুব ভালো করে মনে আছে। এ জেলার মেয়েরা সঙ্গবদ্ধ ভাবে নকশিকাঁথা সেলাই করতে অভ্যস্থ। যখন ১০ থেকে ১৫ জন মিলে আমরা কাঁথা সেলাই করতাম, সেই ফজলু মড়লের ফজলি আমের বাগানে। সেলাই করার তালে,বাতাসের বেগে একটা জোরে ভট্ করে শব্দ হতো। সবাই মিলে দৌড়াতাম ঐ আম গাছের নিচে। দৌড়াতাম  অনেক বেগে। কে আগে আমটা নিতে পারে। যদিও সবাই মিলে ভাগ করে খেতাম। লবন মরিচ দিয়ে। কাঁচা আমের সাথে যে লবন মরিচের সম্পর্কটা সেটা কিন্তু এ জেলার মানুষ বেশ ভালো করে জানে।

কলেজে পড়ুয়া বায়েজিদ বোস্তামী। তিনি জানান; আমি যখন ছোট ছিলাম।বেশ কজন বন্ধু মিলে স্কুল পলাতাম। স্কুল  ‍ছুটি হওয়ার আগে বাড়িতে গেলে মা কিংবা মা বকা-ঝকা করতো। যারা স্কুল পলাতাম; সবাই মিলে আমের বাগানে গিয়ে ভীড় জমাতাম। বাগানে থাকতো জোগানদারের জন্য বিশেষ আশ্রয়স্থল। যেটাকে আমরা বলি টং। ফাঁকা মাঠ। আম বাগানের শিতল হওয়া। ইস.... মনটা উতলা উঠে উঠতো। আগেই থেকে বলা থাকতো; সবাই যেন নিজ বাড়ি থেকে কাগজে করে লবণ আর গুড়া মরিচ মিশিয়ে নিয়ে আসে।আগের কথায় সবাই আনতো। জোগানদারের চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েকটা আম পাড়তাম। পাশের নিকটস্থ এলাকা থেকে হাসুয়া বা ছুরি সংগ্রহ করতাম। আমের চকা ছিলতাম। পিচ পিচ করে কেটে নিয়েও আসতাম। সেই টং গিয়ে বেসুরা গান ধরতাম। আর মজা করে লবন মরিচ দিয়ে কাঁচা আম খেতাম। আর সেদিন নেই। বড় হয়েছি; আন্দদটাও ফুরিয়ে গেছে।

মেহেদী হাসান শিয়াম। সে একজন শিক্ষার্থী। পারিবারিক ক্ষেত্র বিশেষে সে চট্টগ্রামে কাটিয়েছে ছোটবেলার সময়টা। সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। তিনি জানান; আমার জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলেও; অনেক সময় ধরে জেলার বাইরে থাকতে হয়েছে। যখন ছুটি জেলায় আসতাম তখন খুব আনন্দ পেতাম। বিশেষ করে আম যখন গাছের ডালে থোকায় থোকায়  ঝুলতো। কী দারুণ লাগতো। কেউ কারো গাছে হাত দেয়না। সবাই নিজ নিজ বাগানের যত্মে ব্যস্ত। ফলন বেশ ভালো হবে; ফলন বাম্পার হলে দামও জুটবে বেশি। কাঁচা আম আর লবন বাটা; আম খাওয়ার যে কী মজা সে কিন্তু বলে বোঝাবার নয়। বেশ সুস্বাদু। জিভে জল আসবে আসবে ভাব। যদিও টক লাগে। কিন্তু বেশ মজার। যে খেয়েছে; সে কিন্তু ঐ কাঁচা আমের সাথে লবন মরিচের সম্পর্কটা জানে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এ কে এম মঞ্জুরে মওলা জানান, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ৭০০ হেক্টর বেশি। এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। এ বছর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ গাছ মুকুলিত হতে পারে আশা করছেন তারা। আরও দুই সপ্তাহ সময় রয়েছে গাছে মুকুল আসার জন্য।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com