Jan 3, 2021

জরুরি ১০ পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ


কোভিড-১৯ সম্পৃক্ত অতি জরুরি ও প্রয়োজনীয় দশটি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসব পরীক্ষায় অনেক বেশি ফি আদায় করছিল। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীদের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) পরীক্ষাগুলোর দাম বেঁধে দেন।

তবে বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কম মূল্যে পরীক্ষা করছে। নতুন মূল্য তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। তারা দশটি পরীক্ষার জন্য পুরনো দামই রাখবে। যারা বেশি ফি আদায় করেন তাদের জন্য বেঁধে দেয়া ফি প্রযোজ্য হবে।

যে ১০টি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো- রক্তের সিবিসি পরীক্ষা, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। যদিও বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ভেবে এ পরীক্ষা করাতে ব্যয় হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। সিআরপি পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ টাকা। হাসপাতাল ভেদে এজন্য ব্যয় হয় ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা। এলএফটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা। হাসপাতাল ভেদে এ পরীক্ষায় ব্যয় হয় ৯৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা। সিরাম ক্রিটিনিন-এর মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৪০০ টাকা। এ পরীক্ষাটি করাতে হাসপাতাল ভেদে ব্যয় হয় ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকা। সিরাম ইলেকটোলাইট পরীক্ষা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকে এ পরীক্ষা করাতে ব্যয় হয় ৮৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা। ডি-ডাইমার পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ১৫০০ টাকা। প্রতিষ্ঠান ভেদে এতে ব্যয় হয় ১১০০ থেকে ৩২০০ টাকা। এস ফেরেটিনিনের পরীক্ষা মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১২০০ টাকা। প্রতিষ্ঠান ভেদে এর জন্য ব্যয় করতে হতো ১০০০ থেকে ২২০০ টাকা। এস প্রকালসাইটোনিনের মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ২০০০ টাকা। আগে এর জন্য ব্যয় করতে হতো ১৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা। চেস্ট সিটি স্ক্যান-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০০ টাকা। প্রতিষ্ঠান ভেদে এ পরীক্ষায় রোগীদের ব্যয় করতে হয় ৫০০০ থেকে ১৩ হাজার টাকা। চেস্ট এক্স-রে (অ্যানালগ)-এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা এবং ডিজিটালের ক্ষেত্রে ৬০০ টাকা। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষার ব্যয় যথাক্রমে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।

তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব পরীক্ষার ব্যয় এর চেয়ে অনেক কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মূল্য নির্ধারণ করা দরকার ছিল। কিন্তু এখানে জনসাধারণের স্বার্থের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কারণ বেশকিছু পরীক্ষা বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত সেবা মূল্যের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সিবিসি করাতে ব্যয় হয় ১৫০ টাকা, সিরাম ক্রিটিনিন-এর মূল্য ৫০ টাকা এবং এস ইলেকটোলাইটের মূল্য ২৫০ টাকা। এছাড়া চেস্ট এক্স-রে অ্যানালগ ও ডিজিটাল যথাক্রমে ২০০ ও ৩০০ টাকা এবং চেস্ট সিটি স্ক্যান-এর মূল্য ২০০০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এসব পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য অনেক কম। এটা বেসরকারি হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা যেন রোগীদের কাছ থেকে এ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি না নেন। তবে আমি মনে করি যেসব সরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করা হয় সেখানে পরীক্ষাগুলো বিনামূল্যে করা যেতে পারে। সরকার একটি প্রণোদনার মাধ্যমে এ ব্যবস্থা নিলে রোগীরা উপকৃত হবে।

যদিও মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ডেঙ্গি রোগীর মতো কিছু সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হয়। সেগুলোর সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণের জন্য অধিদফতর থেকে বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক মালিক ও ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কিছু কর্পোরেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়। সেই আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবিত খসড়া মূল্য চূড়ান্ত করা হলো। এখন থেকে এ নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হিসাবে গণ্য হবে। তবে যারা আগে এরচেয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে পরীক্ষা করত তাদের ক্ষেত্রে সেই হ্রাসকৃত মূল্যই প্রযোজ্য হবে।

নির্ধারিত মূল্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীদের সেবা দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা যুগান্তরকে বলেন, আমরা সাধারণ রোগীদের সুবিধার্থে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেউ অতিরিক্ত আদায় করছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com