করোনার কারণে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর আকাশপথে চালু হলো ভারত-বাংলাদেশ ফ্লাইট। 'এয়ার বাবল' চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ ও ভারত ২৮টি করে ৫৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এতে সপ্তাহে পাঁচ হাজারের মতো যাত্রী উভয় দেশে যাতায়াত করতে পারবে।
গতকাল চেন্নাই-ঢাকা, চট্টগ্রাম-চেন্নাই-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
এয়ার বাবল নিয়ে চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রস্তাবে উভয় দেশের যাত্রীদের জন্য ৭২ ঘণ্টা আগের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। ভারতের স্পাইস জেট, ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া, গোএয়ার, ভিস্তারা-এই পাঁচ এয়ারলাইন্স দিলিস্ন-কলকাতা-চেন্নাই-মুম্বাই-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-দিলিস্ন, দিলিস্ন-ঢাকা, ঢাকা-কলকাতা এবং কলকাতা-ঢাকা রুটে, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-কলকাতা, কলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-চেন্নাই, চেন্নাই-ঢাকা রুটে এবং নভোএয়ার ঢাকা-কলকাতা এবং কলকাতা-ঢাকা রুটে বিমান
হপরিচালনা করবে।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১২ মার্চ থেকে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ভারত। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে
শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রোগী ও আটকেপড়া উভয় দেশের নাগরিকরা। দীর্ঘ বিরতির পর ফ্লাইট চালুর উদ্যোগে তাদের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। পর্যটক ছাড়া ৯টি ক্যাটাগরির যাত্রীরা ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
এয়ার বাবল নিয়ে চুক্তির বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য ভারতের সঙ্গে এয়ার বাবল নামের বিশেষ চুক্তি করা হয়েছে। দুই দেশ ভ্রমণেই কোভিড নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া চেন্নাই ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রদেশটির ই-পাস লাগবে। তিনি বলেন, বিশ্বে বাবল এয়ার চুক্তি একটি স্বীকৃত বিষয়। দুই দেশের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে। এটি কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি নয়। উভয় দেশের স্বার্থ বিবেচনা করেই বাবল বিষয়ে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্লাইট দুটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ক্যাপ্টেন শিকদার মেজবাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও জানান, সোমবার ব্যতীত সপ্তাহের ছয়দিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সকাল ৯-৪৫ মিনিটে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০-১৫ মিনিটে কলকাতায় অবতরণ করবে। এ ছাড়া কলকাতা থেকে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ছেড়ে আসবে এবং ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুপুর ১২-৩০ মিনিটে অবতরণ করবে।
বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ২৯ অক্টোবর থেকে ঢাকা-দিলিস্ন-ঢাকা রুটে, ১ নভেম্বর ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা এবং ১৫ নভেম্বর ঢাকা-চেন্নাই-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইট শুরু করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলেছে, টু্যরিস্ট ভিসা ছাড়া বাকি সব ক্যাটাগরির ভিসাধারী বাংলাদেশি যাত্রীরা আকাশপথে নির্ধারিত রুটে ভারতে ভ্রমণ করতে পারবেন। গত ১২ মার্চ যে ভিসাগুলো স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে টু্যরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা ছাড়া বাকি সব ক্যাটাগরির ভিসা আকাশপথে নির্ধারিত রুটে ভ্রমণের জন্য সচল করা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সব কূটনৈতিক বা অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভারত সফরে ভিসা অব্যাহতি সুবিধা পাবেন। ভারতের যেকোনো নাগরিক ও ওভারসিজ সিটিজেনশিপ অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) কার্ডধারীরাও এয়ার বাবল সুবিধায় ভারতে যেতে পারবেন।