টুটুল রবিউল,নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ
খাবার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসী। প্রতি লিটার পানিতে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিকের উপস্থিতি সহনীয় ধরা হলেও জেলার এক ইউনিয়নে ১.০২ মিলিগ্রাম আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
ভূ-প্রকৃতি অনুসারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বরেন্দ্র ও দিয়াড় অঞ্চলে বিভক্ত হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈশিষ্টই আর্সেনিক প্রকটভাবে বিদ্যমান। জেলায় পদ্মা, মহানন্দা, পুণর্ভবা, পাগলা নদীসহ ভুপৃষ্ঠস্থ অনেক পানির উৎস বিদ্যমান। কিন্তু এসব উৎসের পানি খাওয়ার উপযোগী নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ভৌগলিকভাবে বরেন্দ্রাঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় এবং কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে ভুগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায়, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে জেলার খাবার পানির উৎসের বেশীরভাগ অকেজো হয়ে পড়ে। তারপরও ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে জেলার খাবার পানির উৎসগুলোতে আর্সেনিক নামক নীরব ঘাতকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সুত্রমতে, জেলার নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলায় আর্সেনিকের তেমন প্রাদুর্ভাব লক্ষ্যনীয় না হলেও সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলায় আর্সেনিকের মারাত্মক উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বর্তমানে সদর উপজেলার শতকরা ১৫-২০ টি , শিবগঞ্জ উপজেলার শতকরা ২০-২৫টি এবং গোমস্তাপুর উপজেলার শতকরা ১০টি পানির উৎসে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সদর উপজেলার রাণীহাটী, মহারাজপুর, বারঘরিয়া ও চর অনুপনগর ইউনিয়নে আর্সেনিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এক লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম হলেও চর অনুপনগর ইউনিয়নে এ মাত্রা ১.০২ মিলিগ্রাম। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বলে উল্লেখ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বাংলাদেশের মান অনুযায়ী যেসব এলাকায় ৫% নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যায়, সেসব এলাকাকে আর্সেনিক দূষণের শিকার এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী ১ লিটার পানিতে ১০ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকলে সেই পানি দূষিত। সেখানে শিবগঞ্জ, সদর ও গোমস্তাপুর উপজেলার পানির উৎসগুলোতে ০.২৫ থেকে ১.০২ মিলিগ্রাম আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার বলেন, জেলায় আর্সেনিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তার দপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে ভোলাহাট, শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ১০০ ফুট, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১২০ ফুট এবং নাচোল উপজেলায় ১৫০ ফুট গভীরতায় টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। এ মৌসুমে খাবার পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ হতে হস্তচালিত নলকুপের পরিবর্তে সাবমারসিবল পাম্পযুক্ত নলকুপ স্থাপণ করা হচ্ছে। সকল পানির উৎস হতে পানি সংগ্রহ করে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়ে থাকে এবং যেসব উৎসে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে সেসব উৎসে রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার সংযুক্ত করা হচ্ছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার সরকার আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেও 'পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্প' এর কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ পানির উৎসের আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে ধারণা লাভের লক্ষ্যে আরও গভীরের (৮০০ ফুট বা তারও বেশী) পানির উৎস অনুসন্ধানে কাজ শুরু হয়েছে। যে সকল এলাকায় সহজলভ্য পানির উৎস নেই বা থাকলেও পানযোগ্য নয়, সে সকল এলাকায় পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে সিভিল সার্জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডাঃ জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, জেলায় আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী নেই। জেলার কোন কোন এলাকা আর্সেনিক ঝুঁকিতে আছে, এবিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চিঠির মাধ্যমে জানালে সেসকল এলাকার জনগণকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি।