মাতাল হয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে জনরোষে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের এক ইউপি সদস্য। জানা যায়, স্থানীয় যুবকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ১নং কাঞ্চনতলা পাইকড়তলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শিকার ওই ইউপি সদস্য হলেন-তরিকুল ইসলাম (৩৩)। তিনি বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য। তরিকুল ১নং কাঞ্চনতলা বিনপাড়ার তৈমুর আলী বিনের ছেলে।
সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে এলাকায় ত্রাণের চাল ১০ কেজির জায়গায় ৯ কেজি দেয়ায় ওই ইউপি সদস্যের ওপর ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তরিকুল দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত। থানা পুলিশের কতিপয় মাদকাসক্ত সদস্যের সাথে গভীর সখ্য তার। ঋণ খেলাপি হয়ে আত্মগোপনে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান আকবর। এই সুযোগে প্রায় রাতে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে টহল পুলিশকে নিয়ে ভূরিভোজ করেন তরিকুল। সেখানেই বসে মাদকের আসর। ঘটনার পর থেকেই তিনি পুলিশ দিয়ে গ্রামবাসীকে হয়রানি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার এশার নামাযের আগে গ্রামের পাইকড়তলায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার জামাই ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদের ও ঢাকা ফেরত রুবেল হোসেন। পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন গ্রামের আরো কয়েকজন যুবক।
ওই সময় সেখানে পৌঁছান ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম। সাথে গ্রামপুলিশ ও ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ডালিম হোসেনও ছিলেন।
ইউনিয়ন সদস্য গিয়েই অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে আবদুল কাদেরকে হাতে থাকা লাঠি ছুঁড়ে মারেন। এসময় অন্যরা ছত্রভঙ্গ হলেও থেকে যান আবদুল কাদের ও রুবেল।
পালিয়ে যাওয়া যুবকদের লোকজন নিয়ে ধাওয়া করেন ইউপি সদস্য। ফিরে এসে তিনি আবারও কাদের উপর চড়াও হন। ওই সময় পাশের চায়ের দোকান থেকে কাদের ও রুবেল লাঠি এনে প্রতিরোধ করেন। একইসাথে প্রতিরোধে গ্রামের যুবকদের বেরিয়ে আসার আহবান জানান। তার আহবানে গ্রামবাসী বেরি এলে পালিয়ে বাঁচেন ইউপি সদস্য।
খবর পেয়ে রাতেই থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এলাকাবাসীকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে মাইকিং করে যায় পুলিশ।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যান।
জেলা পুলিশের গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান দলবল নিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দেন। আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এনিয়ে এলাকায় থমথমে আবস্থা বিরাজ করছে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি এলাকায় যেনো লোকজন অযথা ঘোরাফেরা না করে সেবিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমরা টহলে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে এসব মিথ্যে ও বানোয়াট।’
তিনি বলেন, ‘সেদিনও আমাদের সাথে ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাসির আলী, ৪জন চৌকিদার, ১জন আনসার ছাড়াও আরো ৩জন ছিলেন। আমরা আমাদের ডিউটি করছিলাম মাত্র।’
জানতে চাইলে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শুকুরুদ্দিন বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না তরিকুল, নাসিরেরাই ভালো বলতে পারবে।’ আজ ইউনও স্যারের ওখানে মিটিং এ যাওয়ার পথে সচিব রবিউল ইসলামের মুখে ঘটনাটি শুনেছি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে বার বার সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই আইন মানছে না। সরকারী কাজে বাধা দেওয়া মানে আইন লঙ্ঘন করা। ঘটনার পর আমরা তাদের বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু বাড়ি ছেড়ে তারা সবাই গা-ঢাকা দিয়ে আছে। ’ইউপি মেম্বার তরিকুলের মদ্যপানের বিষয়ে তিনি জানান, যারা এ কান্ডটি ঘটিয়েছে তারা নিজেরা বাঁচার জন্য এসব বলছে।
সুত্র-পদ্মা নিউজ।