চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছুট আইড়ামারী শেখপাড়া গ্রামে এক পাগলীকে এলাকার ৩ পাষন্ডের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার ১৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে ওই পাগলীকে বাখোরালী বাজার পার্শ্ববর্তী মাঠে নিয়ে গিয়ে ভুট্টা ক্ষেতে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পাষন্ডরা।ধর্ষণকারীরা হচ্ছে, শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছুট আইড়ামারী সেখপাড়া গ্রামের মৃত খোকা সেখের ছেলে অহিদুল (২৮), মো. নজরুল সেখের ছেলে মো. দুরুল (৩০) ও মো. নবি সেখের ছেলে মো. সানাইল (২৬)।
এই ঘটনা জানাজানির পর থেকে ঐ এলাকায় বা অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওই পাগলিটিকে।
স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বাখোরালী বাজারে আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী একজন পাগলি বেশ কিছুদিন থেকে অবস্থান করছিল। কোথা থেকে বা কিভাবে এসেছে, তা কেউ জানেন না। আসার পর কয়েকদিন শাড়ি কাপড় পড়লেও কিছুদিন থেকে একটি জিনসের প্যান, কামিজ শাড়ি সুয়েটার পরে ২৪ ঘন্টায় বাখোরালী বাজারের মৃত-নজরুল বিডিআর এর নতুন মার্কেটের সামনে ফাঁকা জায়গা বা খোলা মার্কেটে, তাজেম মোল্লার গলিতে, বাজারের রাস্তার পাশের দোকানের বারান্দায় কখনো বসে, আবার কখন শুয়ে থাকতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়জন লোক জানায়,মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিন পাষন্ড অহিদুল, দুরুল ও সানাইল একসাথে পাগলিটিকে মাঠে নিয়ে যায় এবং গণধর্ষন করে। সুত্রগুলো আরও জানায়, রাতভর ধর্ষন করে পাগলিটিকে সকালে বাড়ি এনে গোসল করিয়ে অটোরিক্সা ভাড়া করে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয় ওই পাষন্ডরা। বিষয়টি রাতেই এলাকার কিছু মানুষ জানতে পারে এবং ওই ৩ পশুরুপীদের বিচারের দাবি উঠে।
জঘন্যতম একাজের শাস্তির দাবীতে এলাকাবাসীর চাপে বিষয়টি নিয়ে ৩ ধর্ষককে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ১৬ এপ্রিল রাতে এলাকার মাঠে গোপনে ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রউফ ও শফিকুল ইসলাম বসে। সেখানে এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে যেন আর কোন কথা না হয় এলাকায় সেটা মেটানোর দায়িত্ব নেয় ইউপি সদস্যরা। কিন্তু এলাকার মানুষ এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে ধামাচাপা দেয়ার পথ থেকে সরে আসে ২ ইউপি সদস্য।
এব্যাপারে ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার এলাকার ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রউফ জানান, বিনোদপুর ইউনিয়নের ছুট আইড়ামারী সেখপাড়া গ্রামে এক পাগলীতে এলাকার ৩ পাষন্ডের ধর্ষণের অভিযোগ স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরে ওই ৩জনসহ কয়েকজনকে নিয়ে বসেছিলাম। তবে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ধর্ষনকারী ৩ জন স্বীকার না করলেও ঘটনা যখন জানাজানি হয়েছে, তখন এর মধ্যে অবশ্যই কিছু আছে। তিনি আর বলেন, একজন পাগলীকে নিয়ে এধরণের ঘটনার প্রকৃত রহস্য জেনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন।
এবিষয়ে আরেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, এঘটনা যখন জানাজানি হয়েছে, এলাকার বেশীরভাগ মানুষ অভিযোগ তুলেছে, তখন অবশ্যই এটার সত্যতা রয়েছে। নাহলে, এলাকার এতো মানুষ থাকতে ওই ৩জনের নামে অভিযোগ উঠলো কেন? তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বিষয়টি জেনে বিচারের চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা অস্বীকার করায় কিছু ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মা, বোন সকলের আছে। তাই এসব জঘন্য বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। বিষয়টি আরও ভালোভাবে জেনে শুনে প্রয়োজনীয় বিচারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, অহিদুল ও দুরুল পেশায় চোর। তাদের চলাফেরা ও আচরনও খারাপ। তাদের দ্বারা সব করা সম্ভব।
এব্যাপারে ধর্ষক অহিদুলের সাথে কথা হলে, সে জানায়, অভাবের কারণে খারাপ হলেও চুরি করি। আমার মা ভিক্ষা করে খাই। কিন্তু পাগলী ধর্ষণের সাথে আমি জড়িত নই। এলাকার মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দোষ চাপাচ্ছে। আমি ও দুরুল চুরি করি। কিন্তু এলাকার বাহিরে, আর সানাইল অটো চালাই। এলাকার আরও মানুষ থাকতে ৩জনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সে সদুত্তর না দিয়ে এলাপাথাড়ি কথাবার্তা বলে।
শিবগঞ্জ থানা পুলিশ এস.আই মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর বিভিন্ন সুত্র থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, অহিদুল ও দুরুল এবং সানাইল এমন জঘন্য কাজ করেছে। তবে ওই পাগলিটিকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।ওই পাগলিটির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।