চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে বই পড়ার পাঠক নেই।বুকশেল্ফে
(বই রাখার তাক) থরে থরে সাজানো বই।সেখানে পাঠকদের জন্য কী নেই।আছে সোফাসহ কাঠের চেয়ার
টেবিল। আরও আছে বৈদ্যুতিক বাতি আর পাখা।প্রকৃতির দেয়া আলোর সাথে সুনশান পরিবেশ।কিন্তু
যাদের জন্য এই ব্যবস্থা, নেই সেই পাঠক।
এ
গ্রন্থাগারটিতে ৩৪ হাজারের বেশি বই থাকলেও পাঠক সংখ্যা দৈনিক ১২ থেকে সর্বোচ্চ ২৮
জন।তাও ফের ওই ২৮ জনের মধ্যে অধিকাংশ পাঠক পত্রিকা পড়তেই বেশি আসে।গত ১২ বছরে গ্রন্থাগারটিতে
সদস্য হয়নি আশানুরুপ।২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৩১ জন। পাঠকদের
বক্তব্য হচ্ছে, গণগ্রন্থাগারে চাকরি প্রত্যাশীদেই বইয়ের সংকট রয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যবহারের
সুযোগ থাকলেও এক-দু জনের বেশি ব্যবহার করতে পারেন না।তবে দায়িত্বশীলরা জানালেন, জনবল
সংকটের কারণে কোনো রকমে চলছে গ্রন্থাগারটি।
গণ
গ্রন্থাগারটির সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে চালু হয় জেলার এ গণগ্রন্থাগারটি। ৩৪ হাজারের
বেশি বই আছে এখানে।এখানে বসে প্রায় ৬০-৭০ জনের বসে পড়ার ব্যবস্থা আছে।এখানে ১২ টি সংবাদ
পত্র পাওয়া যায়।৮ জন জনবলের বিপরীতে আছে মাত্র দুইজন।গ্রন্থাগারিকের মতো প্রধান পদ
চলছে গ্রন্থাগার সহকারী দিয়ে।
সরজমিনে
একদিন জেলার সরকারি এ গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেলো; শনি থেকে বুধবার পর্যন্ত, সপ্তাহে
মোট পাঁচ দিন খোলা থাকে এই গণগ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের ঢুকতেই চোখে পড়লো রেজিস্ট্রার
খাতা।খাতাতে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখা গেলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৬ পর্যন্ত পাঠকের দেখা
মিলে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ২৮ জন।আগতরা প্রতিদিনই আসেন।এখানে নতুন কোন পাঠকের স্বাক্ষর
দেখতে পাওয়া যায়নি।তবে আগতদের বেশির ভাগই চাকরিপ্রত্যাশী অথবা শুধু সংবাদপত্র পড়তে
আসেন।এখানে নারি ও শিশুদের পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও গত মার্চ মাসে নারি এসেছেন হাতেগোনা
মাত্র কয়েকজন। আর শিশু? তাদের কথা নাই বললাম। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোন শিশুর নাম
দেখা যায়নি গ্রন্থাগরের ওই রেজিস্ট্রার খাতায়।
দশম
শ্রেনীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী স্মরণ।সে তার বন্ধুর সাথে গ্রন্থাগারে বসে ইসলামের ইতিহাস
বই পড়ছিল।সে রাইজিংবিডিকে জানাল, বন্ধুদের দেখতাম তারা এ পাঠাগারে পড়তে আসত, তাদের
দেখাদেখি আমিও আসা শুরু করলাম।কোচিং প্রাইভেটের কারণে চাপ বেড়েছে।ফলে পাঠাগারে আসার
সময় পাওয়া যায় না। সপ্তাহে দুই দিন কোচিং ছুটি থাকে, শুধু মাত্র ছুটির দিন করে পাঠাগারে
আসতে পারি।আগে যে বন্ধুরা এখানে পড়তে আসত, তারা এখন সবাই কোচিং আর প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত।অভিভাবকদের
ভিতরে প্রতিযোগিতা বাড়ায়, এখন আর পাঠাগারে কেউই আসতে চাইনা।
মাইনুল
ইসলামসহ আরও একজন চাকুরি প্রতাশী জানান, আমাদের এ পাঠাগারে চাকুরি প্রত্যাশিরা বেশি
বই পড়তে আসেন।চাকুরির জন্য প্রস্তুতির বই গুলো বাড়ানো দরকার।এখানে পুরানো দুটি সিরিজ
আছে।নতুন কোন বই নিয়ে আসেনি, পাঠাগার কতৃপক্ষ।তাদের একাধিকবার বলা হলেও কোন পদক্ষেপ
নিচ্ছেনা।এছাড়াও এখানে ইন্টারনেট কর্ণার থাকলেও একজনের বেশি ব্যবহার করতে পারেন না।
মইন
হাসান নামের এক পাঠক জানান, এ পাঠাগারে এখন পত্রিকা আর জব প্রিপারেশনের জন্য পাঠক আসে।বিশ্বকে
জানার জন্য যে বই গুলো আছে, সেগুলো বই পড়ার জন্য কোন পাঠক আসেনা।অল্প বয়সে ভার্চ্যুয়াল
জগতে প্রবেশের কারণে নতুন প্রজন্ম একেবারেই গ্রন্থাগার থেকে বিমুখ।এদের গ্রন্থাগারে
ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।পাঠাগারের পক্ষ থেকে স্কুলে স্কুলে
গিয়ে, এ ল্যাইব্রেরীতে আসার জন্য স্পৃহা যোগালে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে পারে।
জেলা
সরকারি পাঠাগারের গ্রন্থাগার সহকারী গোলাম মোস্তফা রাইজিংবিডিকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের
সরকারি পাঠাগারটিতে ৮জন জনবল থাকার কথা থাকলেও মাত্র ২ জন লোক আছে।পরিছন্নতা কর্মী
না থাকায়, আমাদেরকে পাঠাগারের সব কিছু পরিষ্কার করতে হয়।এখানে ৩৪ হাজার বই থাকলেও পাঠকের
সংখ্যা একেবারেই কম।পাঠাগারের যারা নিয়মিত আসে, কেবল তারাই আসে।নতুন পাঠকের উপস্থিতি
একেবারেই কম।
তিনি
আরও জানান, পাঠাগারের যারা সদস্য আছে তাদেরকে ফোন দিয়ে ডাকা হলেও, তারা পাঠাগারে আসতে
অনিহা প্রকাশ করে।আমাদের পাঠাগারের উদ্যোগে বছরে ৭টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করি, কেউ আসে,
আবার কেউ আসেনা।