পরিবারিক ভাবেই নিকটাত্মীয় ৮ জন ব্যক্তি।তিনটি পরিবারকে মামলা দিয়ে গাহিল করতে ওই আটজন মিলেই আদালতে করেছেন ৪ মামলা। কিন্তু চার মামলার বাদিই ফের মামলা গুলোর সাক্ষি। আজব হলেও বাস্তব ৩০ বছর পূর্বে মারা যাওয়া ব্যক্তিতে করা হয়েছে সাক্ষি।
তিন পরিবারকে ফাঁসাতে মামলার আসামী করা হয়েছে;
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চর মাহনপুর দক্ষিন পাড়ার মৃত নৈয়মুদ্দিন
মাস্টারের ছেলে রেজাউল ইসলাম রেজা, একই এলাকার মৃত বাক্কার মেম্বারের ছেলে কাবির, মৃত
মুনসুর মাস্টারের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানসহ আরও ৪ জনকে। প্রথম মামলায় সুবিধা না
পেয়ে একের পর এক মামলা ঠুকে ওই তিন পরিবারকে হয়রানী করছে ওই ৮ জনের সংঘবদ্ধ চক্রের
সদস্যরা।
মামলার নথিপত্র ও অনুসন্ধান সূত্রে জানা
গেছে; প্রথম মামলার বাদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চরমোহনপুর-জামাইপাড়া এলাকার আজহারের
ছেলে মো. দুরুল। বাদি দুরুল এজাহারে বলেছেন, মামলার আসামি রেজাউল ইসলামকে তিনি ১০ লাখ
টাকা, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে কাবির আর মিজানকে নগদে ৪০ লাখ এবং একটি বিকাশ
মোবাইল নাম্বার থেকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন।
রেজাউল ইসলাম লিখিত ভাবে প্রতিবেদকের কাছে
অভিযোগ দিয়ে বলেন, মামলার বাদী দুরুল একজন ভূমিহীন খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ।
গত ৭-৮ বছর ধরে দুরুল সরকারি খাস জমিতে খড়ের ঘরে বসবাস করেন।দুরুল দিন মজুরের কাজ করে
কোন রকমের সংসার চালান। পাওনা টাকা শোধ করতে না পারায় তার গাভিও নিয়ে চলে যায় ওই এলাকার
তরিকুল ভোলা নামের এক ব্যক্তি। সে আমাদেরকে কেমন করে লাখ লাখ টাকা দিবে।”
রেজাউল বলেন, মামলার বাদি দুরুল এজহারে বলেছেন আসামী কবির আর মিজানকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু যে হিসাব নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছে দুরুল, সে আমাদের কারোর নয়। ওই হিসাব নাম্বারটা এম আলী এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারী মোহাব্বত আলী নামের এক ভদ্র লোকের। আমাদের সাথে মোহাব্বত আলীর কোন সম্পর্ক নেই।
রেজাউল আরও বলেন, আমরা জানতে পেরেছি; মোহাব্বত
আলী রাজশাহীতে জমি কিনতে টাকা দুরুলকে ধার
দিয়েছেন।এর প্রমাণ স্বরূপ তাকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একটি চেক দেয়াও হয়েছে। সেখানে
কোথাও, কোনভাবে আমার, মিজান আর কাবিরের নাম নেই। অথচ তাদেরকে মামলার আসামী করা হয়েছে।
মামলার বাদি দুরুল এজাহারে উল্লেখ করেছেন;
একটি বিকাশ নাম্বার থেকে আসামীদেরকে ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা
গেছে ওই বিকাশ নাম্বারটি জেলা সদরের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার আলেয়া বেগম নামের এক মহিলার।
কিন্তু সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে ২০ লাখ টাকার লেনদেনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী রেজাউল,
কাবির ও মিজানের কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার অনুরোধ
জানিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। এবং বিউটি, তার পিতা আনারুল ও মা সেমালী বেগমের
এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদেরকে অভিযুক্তও করেন ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার
বাদি দুরুল আদালতে এ তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নাখোশ হলে, ফের মামলাটি তদন্ত করতে
আলাদন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে আদেশ দেন। এখনও মামলাটি তদন্তাধীন আছে।
প্রথম মামলার ৮ মাস পর দ্বিতীয় মামলা করেন
প্রথম মামলার সাক্ষি মাসুম। এই মামলায় তিনি রেজাউলকে বিউটির স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেন।
অথচ বিউটির স্বামী আরেক জন। রেজাউলের স্ত্রী একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।আদালতে
মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফাঁসাতেই এমন তথ্য দেয়া হয়েছে দাবি রেজাউলের।
প্রথম মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও দ্বিতীয়
মামলা করে ওই তিন পরিবার গুলোকে যখন হেনস্তা করা যাচ্ছেনা। ফের তখনিই মাসুমের ঘনিষ্ট
বন্ধু রুবেল কোর্টে আরেকটি মামলা করেছেন। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী। অথচ এজাহারে রুবেল
অভিযোগ করেছেন, তিনবারে আসামীদেরকে ৪০ লাখ টাকা জমি কেনা বাবদ দিয়েছেন। এই মামলার সাক্ষি
দ্বিতীয় মামলার বাদি মাসুমও। মামলার ভার কম হওয়ায় ওই তিন পরিবারের জীবনকে দূর্বিষহ
করতে আরেকটি মামলা ঠুকেন কৃষক কালাম। এ চার নং মামলার সাক্ষি হলেন, ২য় মামলার বাদি
মাসুম আর প্রথম মামলার বাদির ছেলে আসমাউল।
এজাহারে কালামের অভিযোগ, আসামীদেরকে তিনি ১৩ লাখ টাকা ধার দিয়েছেন। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, সম্পর্কের খাতিরে তিনি প্রথম মামলার বাদি দুরুলকে টাকা ধার দিয়েছেন। টাকা ধার দিয়েছেন দুরুলকে, অথচ মামলা হয়েছে রেজাউল, কাবির ও মিজানের নামে।
এ বছরের ১৯ মার্চে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেস
কাবে চার মামলার বাদিরা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,
ইউরোপীয় ইউনিয়নে দাতা সংস্থার পরিচয়ে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা পায়য়ে দেয়ার নামে তারেকে
কাছে থেকে ৪ কোটি টাকা নেন সংঘবদ্ধ চক্রের আসামিরা। পরে এ ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে
৪ টি মামলা দায়ের করেন তারা। ওই সম্মেলনে মামলার চার জন বাদিরা মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত
দাবি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ ঘটনায় স্থানীয় ভাবে
একটি শালিশী বৈঠক বসে। এ সময় স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ, বর্তমান কাউন্সিলর
ইব্রাহিমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর
ইব্রাহিম বলেন, এ ঘটনায় একটি শালিশী বৈঠক বসে। প্রথম মামলার দুরুল বিউটি নামের এক মহিলাকে
৭০ লাখ টাকা দিয়েছে বলে দাবি করেন। পরে কাউন্সিলর দুরুলকে এ টাকা আয়ের উৎস জানতে জানতে
চাইলে তিনি সঠিক অয়ের উৎসের কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
ওই কাউন্সিলর আরও জানান, ওই শালিশী বৈঠকে
বিউটি উপস্থিত না হওয়ায় সেদিন কোন সুরাহা হয় নি।আমার জানা মতে এখনও ওই ঘটনা এমনই আছে
।