May 5, 2021

চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক কাঠুরের জীবন যুদ্ধে হার না মানার গল্প


চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাস করেন ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধ মো. মশিরউদ্দি।বয়স প্রায় ৭৫ বছর ।জন্ম তার গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।নদীভাঙ্গনের কবলে পড়ে এ জেলায় এসে বাস করছেন।এখন ভাড়া থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগরে।

কথা হচ্ছিলো বৃদ্ধ মশিরউদ্দিনের সাথে।জানালেন তিনি তার জীবনের গল্প।তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধেরে ভিক্ষা করেছি।ভাবলাম এটা তো ইসলাম সমর্থন করেনা।তাই পরনির্ভরশীল না হয়ে থেকে গত ২৮ বছর থেকে কুড়াল হাতে কাঠ কেটে সংসার চালাচ্ছি।এ জায়গায় ৩০ বছর থেকে বসবাস করছি। এ ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় পাইনি কোন সরকারি সাহায্য।দারিদ্রতার কারনে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেনীতে আর ভর্তি হওয়া হয়নি।একদিকে নদী ভাঙ্গন, অন্যদিকে কোন কাজকর্ম না থাকায় বিয়ের পর এক সন্তানকে নিয়ে আরো বিপাকে পড়ে যাই। কোন উপায় না পেয়ে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে চলে আসি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

এখানে এসে সে রকম কোন ভালো কাজ না পেয়ে ৩ মাস অন্যের গরুর পালের রাখাল ছিলাম।যখন তাতেও সংসার চলছিলনা তখন পেয়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেছি। ৯ মাস ভিক্ষা করার পর মাথায় আসে নিজেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী আমজাদ আলী ঝড়ুর নিকট শরণাপন্ন হলে তিনি মশিরউদ্দির হাতে একটি কুড়াল তুলে দেন। ওই কাড়ালের উপর ভর করে গত ২৮ বছর ধরে সংসার চলছে।কুড়াল পাওয়ার পর জেলা শহরের ফিটু ও দুরুলের খড়ির আড়ৎ-এ ১ বছর কাজ করি। এরপর নিজেই শুরু করি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খড়ি ফাঁড়ার কাজ। এতে এখন দৈনিক ৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পাই।৩ ছেলের মধ্যে এক প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলছে আমার সংসার। আলীনগর এলাকার রবিউল ইসলাম মতির বাড়িতে মাসিক ১৫০০ টাকায় ভাড়া থাকে মশিরউদ্দির পরিবার। তিনি আরোও জানালেন, বয়স অনেক হয়েছে, শরীরে কুলায় না। কিন্তু কি আর করার, সংসার চালাতে এই কষ্ট করতেই হচ্ছে। এখান কার আইডি কার্ড নাই, তাই মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সরকারি সহযোগিতা পায়নি।

প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে তারা এখানেই বসবাস করে। খুব কাছ থেকে তাদের দেখে আসছি।কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছে। খেয়ে না খেয়ে দিন যায় তাদের। মেম্বার-চেয়ারম্যানরাও একটু সহযোগিতা করে না। লোকটার নাই একটা বয়স্কভাতা। তার ছেলে প্রতিবন্ধী।তার ছেলের জন্য সে কোন সরকারি সহযোগিতা পায় না। মশিরউদ্দির প্রতি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ০৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এনামুল হক জানান, আমার সাথে যোগাযোগ করলে তার যেকোন একটা ব্যবস্থা করে দিবো।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসা. উম্মে কুলসুম জানান, এমন ব্যক্তি এই বয়সে কুড়াল হাতে কাজ করার বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। তবে বৃদ্ধ মশিরউদ্দিকে যেকোন সরকারি সহায়তা নিতে হলে গাইবান্ধা থেকেই নিতে হবে। কারন সেখানকার ঠিকানায় তার জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com