Nov 4, 2020

বদলে দিবে অর্থনীতি


আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় উপ-আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন বেশ কয়েকটি সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হবে এসব সড়কের ক্ষেত্রে। যার একটি সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের ক্রস বর্ডার সংযোগ স্থাপনসহ ছয় দেশের মধ্যে স্থাপিত হবে সড়ক নেটওয়ার্ক।

৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ দিচ্ছে দুই হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। বাকি ৬১৬ কোটি টাকা রাষ্টীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। চলতি বছর থেকে ২০২৫ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল করিডরের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করা হবে। স্থলবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজ করা হবে। এই সড়ক পর্যটন বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওপারে ভারতের মেঘালয় থেকে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য তামাবিল বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া করায় এই সড়কটি ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, মিয়ানমার ও চীনের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রেও এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রী ও মালপত্র দ্রুত পরিবহন করতে সরকার সিলেট-তামাবিল বিদ্যমান দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ৫৯ দশমিক ৬৮ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ২১টি সেতু নির্মাণ (১৬৩৯ দশমিক ৮৪৯ মিটার), ৫৪টি কালভার্ট নির্মাণ, ১০টি পদচারী সেতু নির্মাণ, ২৬৩১ দশমিক ১০৯ মিটার স্ট্রাকচার ফাউন্ডেশন, ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সড়কের কনস্ট্রাকশন সাইট ফ্যাসিটিলিজ, টোল প্লাজা, এক্সেল লোড স্টেশন, মোটরযান ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রভৃতি কাজ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলার সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলাজুড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের ক্রস বর্ডার সংযোগ স্থাপনসহ উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য স¤প্রসারণ করার পথ সুগম হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞসহ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র বদলে দিতে পারে। তাই যোগাযোগ সেক্টরে সড়ককে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। স¤প্রতি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এতে অংশ নিয়ে সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, সিলেট জোনে বর্তমানে সওজের ১২টি প্রকল্প পুরোদমে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি উচ্চ অগ্রাধিকার, চারটি মধ্য অগ্রাধিকার এবং চারটি নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প। এ অর্থবছরে একটি প্রকল্প শেষ হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেট জোনে ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে ভ‚মি অধিগ্রহণের জন্য।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পটি শুধু দেশীয় চাহিদাই নয়, আন্তর্জাতিক চাহিদাও পূরণ করবে। এটি হলে উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ স্থাপন সহজ হবে। পাশাপাশি স্থলবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে। সর্বোপরি এ অঞ্চলের পর্যটন বিকাশে সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com