প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘সার্বিকভাবে দুর্যোগ (মহামারি) মোকাবেলা এবং দেশকেও সচল রাখা—এই সব ধরনের কাজই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই হয়তো এটা সম্ভব হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বলেই মানুষ এই সহযোগিতা পেয়েছে। এ জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কত মানুষ যে মারা যেত, মানুষের কত যে দুরবস্থা আর কত যে দুর্ভোগ পোহাতে হতো, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’ তিনি জানান, করোনায় ৫২২ নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন, এই ত্যাগ আর কোনো দল করেনি।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের সময় মানুষ যেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সরকার সব কিছু করেছে। করোনাভাইরাস আক্রমণ করলে আমাদের কী পরিমাণ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, তার মধ্যে কতজনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হতে পারে, কতজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হতে পারে—সব বিষয় নিয়ে আমরা হিসাব করেছি। সেই অনুযায়ী হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করেছি। আমরা নিশ্চিত করেছি যেন প্রতিটি জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত অক্সিজেন সাপোর্ট থাকে, আইসিইউ সাপোর্টটা থাকে। হ্যাঁ, শুরুতে এটা করতে কষ্ট হয়েছে ঠিক। কিন্তু এখন আমরা প্রায় সব জায়গায় করে ফেলেছি।’
বাড়তি রোগীর জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসক-নার্স-টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্স আমরা নিয়োগ দিয়েছি। যে টেকনিশিয়ান লাগবে তাদেরও নিয়োগ দিয়েছি।’
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্রুত বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু একটা কথা তো স্বীকার করতে হবে, যখন যেটা নির্দেশ দিয়েছি তারা করেছে। তারা কাজ করেছে বলেই আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।’
সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে তো এখন ভালো ভালো মিডিয়া আছে। আমি তো প্রাইভেটে টেলিভিশন দিয়েছি, প্রাইভেটে রেডিও দিয়েছি, অনেক পত্রিকা দিয়েছি। যে যার মতো আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে বলেই যাচ্ছে। তাদের কিন্তু মাঠে মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তারা কেউ আবার বিচার করে আওয়ামী লীগের... কতটুকু করল আর কতটুকু করল না। কিন্তু তারা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে না।’
আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে রয়েছে এবং মানুষের পাশেই থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জনগণকে এটাই বলতে চাই, জনগণের সংগঠন হলো আওয়ামী লীগ এবং এই আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। যেটা এবার দুর্যোগ, করোনা মহামারির সময়েও প্রমাণিত হয়েছে। কারণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসই আমাদের একমাত্র সম্বল, সেটাই আমাদের শক্তি।’ তিনি এ সময় দলের নেতাকর্মীদের সব সময় জনগণের পাশে থাকারও পরামর্শ দেন। ভূমিহীন এবং নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকার যাতে সহায়তা করতে পারে সে জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমাদের ঘোষণা প্রত্যেক গৃহহীনকে আমরা ঘর করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে করোনা, তার মধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় (আম্ফান) এবং বন্যা—সব মিলিয়ে সারা দেশের মানুষ একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে ছিল। কিন্তু সেই সময় আমাদের দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিটি এলাকায় জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষের পাশে ছিল।