Sep 3, 2020

চার বছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ১১ বিলিয়ন ডলার


 

  • মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে জানালেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নিবন্ধনে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চার বছরপূর্তি উপলক্ষে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সূচকভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সূচকে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬ থেকে ৮ ধাপ এগিয়ে ১৬৮তে উন্নীত হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে বিডার চার বছরের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত বিনিয়োগ বিকাশের জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া, অব্যবহৃত সরকারী জমি/স্থাপনা অধিকতর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের লক্ষ্যে বিডা গঠন করা হয়। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে সংস্থাটি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর বিশ্বব্যাংকের ইজি অব ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা সূচকে বাংলাদেশে বেশি উন্নতি করা ২০টি দেশের তালিকায় ছিল। এ বছর বিশ্বব্যাংক সূচকটি প্রকাশ করলে বাংলাদেশের বেশ উন্নতি হবে। আগামী বছর বাংলাদেশ শীর্ষ ৯৯টি দেশের মধ্যে আসতে পারবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিনিয়োগকারীদের ৩৫টি সংস্থা থেকে দেয়া ১৫৪টি সেবা এক দরজায় বা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বিডা ২১টি সেবা এক দরজা থেকে দিচ্ছে। আরও ১৬টি সেবা এ তালিকায় যুক্ত হবে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬ এর ৪ ধারা অনুযায়ী ওই বছরেরই ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিডা। বিডার ভিশন হলো ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে বিশ্বমানের বিনিয়োগ বিকাশ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া’ বলেও জানান বিডার নির্বাহী। তিনি বলেন, বেসরকারী খাতকে বেগবান করতে এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রতিষ্ঠা করা হয়। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে বিডা, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীর খুব সহজে অতি দ্রুত আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ সেবা, সর্বোচ্চ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং বিনিয়োগে উৎসাহিত করাই বিডার মূলকাজ। এ সময়ে তিনি বিডার অগ্রগতি ও অর্জন তুলে ধরে বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীর সকল ধরনের সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সঙ্গে একাধিক সভা, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক ও কর্মশালার মাধ্যমে কার্যকর ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানের রূপরেখা প্রস্তুত করছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন (ইএসডিপি) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এর আওতায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন ৪৬ হাজার তরুণ। তার মধ্যে ১৪ হাজার ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, এদের মধ্যে আবার দুই হাজার ৯২৬ জন ব্যবসার উদ্যোগও নিয়েছেন। তিনি জানান, জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বিনিয়োগ ও ব্যবসা উন্নয়ন সহায়তা কমিটি’ বিনিয়োগ বিকাশে দায়িত্ব পালন করছে। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে বিনিয়োগ বিকাশ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিডা তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ইওডিবি স্টিয়ারিং কমিটি এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে এনসিএমআইডি কমিটি বিনিয়োগ বিকাশে বিভিন্ন সরকারী কার্যক্রম, সংস্কার বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলেও জানান সিরাজুল ইসলাম। এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার সময় স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, সাধারণভাবেই বিডা চেষ্টাটি করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সচ্ছল মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত ও অন্য দেশে যান। মন্ত্রীরাও বিদেশে যান চিকিৎসা নিতে। ওই মানের কোন বিদেশী হাসপাতালের বিনিয়োগ দেশে আনার চেষ্টা বিডা করবে কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অন্যান্য দেশের তুলনায় খারাপ, সেটা বলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কম দেশেই আছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মানুষ যেখানে ভাল সেবা পাবেন, সেখানেই যাবেন। তাদের আটকে রাখা যাবে না। নিজের দুটি বড় অস্ত্রোপচার দেশেই হয়েছে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো বিদেশে যেতে পারি না। সে সামর্থ্য নেই। আমার অপারেশন হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’

মতবিনিময় সভায় তিনি আগত গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিডার অর্জন, ইজি অব ডুইং বিজনেস, বিনিয়োগ বিকাশে বিডার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময়ে বিডার উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com