বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল ভ্রমণের সময় খুব কাছাকাছি চলে আসছে ঢাকাবাসীর। করোনাভাইরাসের কারণে মাঝপথে এসে লাইন-৬-এর কাজে কিছুটা স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এখন তা কেটে গেছে। প্রকল্প এলাকায় আবারও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে। ফের দিনরাত পালাক্রমে অবিরাম কাজ করছেন শ্রমিক, টেকনিশিয়ান, প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত লাইন-৬-এ চলাচলের জন্য রেলকোচ তৈরি হয়ে গেছে জাপানে। সেগুলো এখন শিপমেন্টের অপেক্ষায়। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেই শিপমেন্ট হয়ে যাবে। দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর অংশে বসানো হচ্ছে রেলট্র্যাক; যার ওপর দিয়েই চলবে ট্রেন। এ অংশে টানা হচ্ছে বৈদ্যুতিক লাইন। এগিয়ে চলছে স্টেশন নির্মাণের কাজও। মাস র্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি লাইন-৬-এর ২১ কিলোমিটার পথে মোট স্টেশন থাকবে ১৭টি। এর মধ্যে দিয়াবাড়ী, মিরপুর ও মতিঝিলে হবে আইকনিক স্টেশন। বাকিগুলো সাধারণ স্টেশন। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময় ২০২২-এর ডিসেম্বরের আগেই মেট্রোরেলে চেপে অত্যন্ত স্বচ্ছন্দে দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল যাতায়াত করতে পারবেন রাজধানীবাসী। সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মেট্রোরেল লাইন-৬-এর দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও অংশে দেখা গেছে, শ্রমিকরা অবিরাম কাজ করছেন। একই সঙ্গে স্টেশন নির্মাণ, রেলট্র্যাক বসানো, রেললাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। আবার মিরপুর-মতিঝিল অংশে বড় বড় ক্রেনে ভর করে বসানো হচ্ছে ভায়াড্রাক্ট; যার ওপর স্থাপন করা হবে রেলট্র্যাক। কর্মরত টেকনিশিয়ান, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের অচলাবস্থার কারণে কিছুদিন বিরতির পর আবার শুরু হয়েছে শিফটিং কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন তারা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মাঝে কিছুটা শিথিলতা লক্ষ্য করা গেছে। অনেককে দেখা গেছে মাস্কবিহীন অবস্থায় কাজ করছেন। মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আশা করছি খুব শিগগিরই সব প্যাকেজের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। করোনা আতঙ্ক কমে যাওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। কাজের এ গতি চলমান থাকলে নির্দিষ্ট সময় ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ ফলে স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়তে ঢাকাবাসীর প্রতীক্ষা শেষ হয়ে আসছে বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র জানান, এমআরটি লাইন-৬-এর প্রথম অংশ দিয়াবাড়ী-মিরপুরের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশের বেশি। এ অংশে এখন রেলট্র্যাক ও বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। প্রথম অংশে ১১ কিলোমিটারের বেশি রেলট্র্যাক ও বৈদ্যুতিক লাইন বসানো হয়েছে। আর দ্বিতীয় অংশ মিরপুর-মতিঝিলের কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। এ অংশে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। ভায়াডাক্ট বসানো শেষ হলেই স্থাপন করা হবে রেলট্র্যাক ও বৈদ্যুতিক লাইন। আর এ লাইন-৬ অংশে চলাচলের জন্য রেলকোচ তৈরি হয়ে গেছে জাপানের কারখানায়। সেগুলো এখন শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেই শিপমেন্ট শুরু হবে। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বরের আগেই রেলকোচ ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এ ছাড়া দিয়াবাড়ী-মিরপুর অংশে স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। পুরো প্রকল্প এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। মেট্রোরেলের জন্য টঙ্গীতে নির্মিত সাবস্টেশন থেকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন টেনে আনা হচ্ছে দিয়াবাড়ীতে স্থাপিত মেট্রোরেল ডিপোয়। একই সঙ্গে পুরো মেট্রোরেলের লাইনজুড়ে একইভাবে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হচ্ছে।
সূত্র জানান, বর্তমানে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের চারটি স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে- দিয়াবাড়ীতে উত্তরা উত্তর, উত্তরা দক্ষিণ, উত্তরা পূর্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা স্টেশন। এর মধ্যে উত্তরার তিনটি স্টেশনের উপরিভাগের নির্মাণকাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তিনটি স্টেশনের কাজ শতভাগ শেষ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। আর যে তিনটি আইকনিক স্টেশন থাকবে সেগুলোর কাজেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কাজের গতিও বেড়েছে।
তবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে দুটি প্যাকেজের কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এ অংশে কাজ করছে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে সব প্রকৌশলীও জাপানিজ। করোনাভাইরাসের কারণে জাপানিরা নিজ দেশে চলে যাওয়ায় এ দুই প্যাকেজের দৃশ্যমান কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুতই তারা ফিরে এসে কাজে যোগ দেবেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে উভয় দেশের দূতাবাস পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। ঢাকায় জাপান দূতাবাসে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তারা দ্রুতই ঢাকায় ফিরে কাজে যোগ দেবেন; যা মেট্রোরেলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন আরেক ধাপ এগিয়ে নেবে।