Jul 4, 2020

ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গোরস্থানে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলায় সরকারি বরাদ্দ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। কাবিখা'র ৫ টন চাল সরকারি বরাদ্দ থাকলেও গোরস্থান কর্তৃপক্ষ পেয়েছে মাত্র ২৪ হাজার টাকা।


গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ০২ নং ওয়ার্ডের অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. নুরুল আমিন, আরো ৯ হাজার মিলিয়ে সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন এবং বাকি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন গোরস্থান কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসী। গোবরাতলা ইউনিয়নের দিয়াড় ধাইনগর উত্তরপাড়া-সিরোটোলা গোরস্থানে সরকারি বরাদ্দের ৫ টন চালের আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হলেও মাত্র ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার বিষয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। জামায়াত নেতা নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও বিস্ফোরণ আইনের মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি সদস্য নুরুল আমিনের সকল অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করে জামায়াত কর্মী একই গ্রামের আজাবুল ইসলামের ছেলে মো. আব্দুল কাদের। 

গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি আলাউল ইসলাম জানান, গ্রামের ২৭০টি পরিবারের জন্য গত ২০ বছর ধরে এই গোরস্থানটি চালু রয়েছে। এখানে মাটি দিতে হলে আগে ৩ হাজার করে টাকা পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন গরিব-অসহায় ব্যক্তির থেকে টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে আমরা এটি রোধ করতে গ্রামবাসীদের নিয়ে বসি এবং নতুন একটি নিয়মতান্ত্রিকভবে কমিটি গঠন করি। পরে গ্রামবাসী সকলের উপস্থিতিতে ইউপি সদস্য নুরুলকে ৫ টন চাল বরাদ্দে ২৪ হাজার টাকা দেয়া প্রসঙ্গে সাফ জানিয়ে দেন, এর বেশি দিতে পারবো না। বাকি টাকা সরকারের বিভিন্ন অফিসে ঘুষ দিতে হয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, ৫ টন চাল বরাদ্দ হলেও আমাদের জানিয়েছে ৪.৫ টন। গত ১৩-১৪ বছরে জামায়াত নেতা, ইউপি সদস্য নুরুল আমিন গোরস্থানের সেক্রেটারি থাকাকালীন প্রায় ৪০ জনের এখানে কবর দেয়া হয়েছে। টাকা নেয়ার কোন রশীদও দেয়া হতো না। 

কাবিখা এই প্রকল্পের একজন অন্যতম সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, আমার কাছে সাক্ষর চেয়েছে তাই দিয়েছি। আমরা তো আগে এতকিছু বুঝতে পারিনি যে, সে এভাবে গোরস্থানের এতগুলো টাকা আত্মসাৎ করবে।

গত প্রায় ২০ বছর ধরে এমনকি বর্তমানেও গোরস্থানের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন আফতাব উদ্দিন। ৩ হাজার করে টাকা নিয়ে কবর দিতে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, ৪.৫ টন চাল বরাদ্দের কথা বলে সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকা গোরস্থানের বাউন্ডারি দেয়াল নির্মানের জন্য দিয়ে রাজি হয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি সদস্য নুরুল আমিন। 

ধাইনগর উত্তরপাড়া-সিরোটোলা গোরস্থানের বর্তমান সভাপতি মো. বজলুর রহমান জানান, সকলের উপস্থিতিতে নুরুল আমিন বলেছে, সরকারি বিভিন্ন অফিসে খরচ হয়েছে তাই ৩৫ হাজারের বেশি টাকা দেয়া যাবে না। এতে যা ইচ্ছে করতে পারো বলে সভাস্থল ত্যাগ করে সে। গত ১৪-১৫ বছর ধরে এলাকার গরিব, অসহায় মানুষের প্রতি সে অনেক অত্যাচার করেছে। এর বিরুদ্ধে শতাধিক গ্রামবাসীর গণসাক্ষর নেয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য নুরুল আমিনের সকল দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করা হবে। দুর্নীতিবাজ ও গোরস্থানের অর্থ আত্মসাতকারী ইউপি সদস্য নুরুল আমিনের এই অত্যচার থেকে রক্ষা চাই গ্রামবাসী। এর উপযুক্ত শাস্তিও দাবি করেন তিনি। 

এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুরুল আমিন, জানান, কোন দুর্নীতি অনিয়ম হয়নি। কাজ চলমান রয়েছে। কত টাকা দিতে চেয়েছেন জানতে চাইলে তা বলতে নারাজ ইউপি সদস্য নুরুল আমিন। এছাড়াও চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।  

গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসজাদুর রহমান মান্নু মিয়া বলেন, গোরস্থানের কাজে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া যাবে না। এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে কাজে যাতে কোন অনিয়ম না হয় তা দেখছি।
সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com