Jan 19, 2021

খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার


করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এ জন্য শ্রমবাজারের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাবও দিয়েছে মালয়েশিয়া। এই শ্রমবাজার চালু হলে মাত্র ছয় মাসেই চার লাখ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার আগ্রহের পরও বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের নানান স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কারণে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে শ্রমবাজার চালুর সিদ্ধান্ত। প্রশ্ন উঠেছে, শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা নাকি বিভিন্ন মহলের স্বার্থরক্ষা কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অবশ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি সচল করতেই মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে কর্মী নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা একটি প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা সেটা নিয়ে স্টাডি করছি। আশাকরি জানুয়ারিতেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব। এ ছাড়া শিগগির বসবে দ্বিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। চলতি মাসেই আসতে পারে সুখবর। কর্মী পাঠানোর সুযোগ মিললে শ্রমিক স্বার্থকে বড় করে দেখার কথা জোর দিয়ে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী।

পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে তছনছ হয়ে গেছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে মোট কর্মী গেছেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। যা তার আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় ৫ লাখ কম। এ বছর টার্গেট ৭ লাখ থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি একেবারেই। বিশ্বে লকডাউনের কারণে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কোনো অভিবাসন হয়নি অর্থাৎ বিদেশে কোনো কর্মী যেতে পারেননি। করোনা মহামারীর আগে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত বিদেশ গমনের যে ধারা অব্যাহত ছিল তা চলতে থাকলে এই বছর পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে বছর শেষে কর্মী গমনের হার কমেছে প্রায় ৭১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে এ বছর কর্মী গমনের চেয়ে প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ ফিরে আসার দিকে। ফেরত এসেছেন সোয়া তিন লাখের উপরে। বিপুল সংখ্যক এই কর্মী এখন দেশে বেকার জীবনযাপন করছেন। কবে শ্রমবাজার স্বাভাবিক হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়েই দুশ্চিন্তা তাদের। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন অভিবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।

 

কাতার থেকে ফিরে আসা জাফর ইকবালের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বড় শ্রমবাজারগুলো যেভাবে একের পর এক বন্ধ হয়ে আসছে, তাতে মালয়েশিয়ার বাজার চালু হলে আমরা বেঁচে যাই। এখন বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ বের করাটা সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া। সরকারি হিসাবে, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি, আধুনিক জীবনযাত্রা, ভালো উপার্জন আর সাংস্কৃতিক মিল থাকায় নিরিবিলি বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে প্রতি বছর মালয়েশিয়ায় যান অসংখ্য কর্মী। বর্তমানে দেশটিতে রয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি। সবশেষ ২০১৮  সালে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার। কিন্তু ওই বছরই সেপ্টেম্বরে দেশটির নতুন সরকার কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এবং গত বছরজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা ছিল নামমাত্র। আবার দেশে ছুটি কাটাতে এসে সেখানে কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি করোনার কারণে আটকে রয়েছেন। এসব কর্মী এখন দিন গুনছেন ফিরে যাওয়ার। 

সূত্র জানায়, দেশটির কৃষি ও নির্মাণ খাতে প্রায় ৬ লাখ লোক পাঠানো যাবে। শ্রমিকরা ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে সেখানে যেতে পারবেন। মালয়েশিয়ার প্রস্তাবমতে ২৫ অথবা ৩০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে লাইসেন্স দিয়ে লোকবল নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে সরকারি পদ্ধতিতে জনশক্তি নেবে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এখানে তেমন কোনো ভূমিকা নেই। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতেই সব হবে। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার শ্রমিক রপ্তানির বিষয়ে সিন্ডিকেট নিয়ে নানান আলোচনা হলেও তখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রতারণা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়ায় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার যে দুর্নামে পড়েছিল তা থেকে মুক্ত হয়েছে দুই দেশ। এক অর্থে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছিল। ১৮ মাসে প্রায় ২ লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। আগের মতো শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল না, অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও খুশি ছিল তারা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হিসেবে মালয়েশিয়ায় মর্যাদা পেয়েছিল। শুধু তাই নয় মালয়েশিয়ার জিটুজি পদ্ধতি শুরুর আগে সৌদি আরব ও কাতারের অভিবাসন ব্যয় আকাশচুম্বী বেড়ে গিয়েছিল। তখন ১০ থেকে ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি হতো সৌদির ভিসা। অন্যান্য ভিসা ট্রেডিংও বেড়েছিল অস্বাভাবিকভাবে। কিন্তু জিটুজি প্লাস চালুর পর সৌদি ও কাতারের অভিবাসন ব্যয় আড়াই লাখ টাকায় নেমে আসে।

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com