দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে আনুমানিক ৩০ ভাগ, আর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩০ ভাগের বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে স্বপ্নের রূপপুর প্রকল্পের ইউনিট ওয়ানের যন্ত্রপাতির টেস্টিং শুরু হবে ২০২২ সালে। জ্বালানি সরবরাহ শুরু হবে ২০২৩ সালের শুরুতে। এপ্রিলে শুরু হবে পাওয়ার লোডের কাজ। সূত্র বলছে, আশা করা হচ্ছে ২০২৩ সালের আগেই প্রকল্পটির জ্বালানি ইউরেনিয়াম বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। সে হিসাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই জ্বালানি রাখার জন্য সব ব্যবস্থা ও অবকাঠামো তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেলের মূল যন্ত্রপাতি এ বছরই শিপমেন্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে চলতি বছরেই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল, স্টিম জেনারেটর ইত্যাদি। এ ধরনের যন্ত্রপাতির কিছু এরই মধ্যে রূপপুরে চলে এসেছে, অন্যগুলোর শিপমেন্ট শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অক্টোবরের মধ্যেই সবচেয়ে বড় যন্ত্রপাতিগুলো দেশে এসে পৌঁছবে। এরপর ইউনিট বিল্ডিংয়ে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। এ জন্য যে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে তা চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছরেই ইউনিট-১ এর ডুম স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প পরিচালক ড. সৈকত আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১১ হাজার জনবল কর্মরত আছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের কাজে কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং গতি বেড়েছে। সব কাজই শিডিউল মতো এগোচ্ছে।
উল্লেখ্য, পাবনার রূপপুরে এ প্রকল্পের পারমাণবিক চুল্লির জন্য ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর জুলাইয়ে দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর ৬৮ মাসের মধ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল স্থাপনা নির্মাণের কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত। প্রতিটি ইউনিট ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন।
পদ্মায় প্রস্তুত বিশেষ বন্দর : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অদূরে পদ্মা নদীতে বিশেষ বন্দর পুরোপুরি চালু হয়েছে। পারমাণবিক কেন্দ্রটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি তেল এ বন্দর দিয়ে নির্মাণস্থানে পৌঁছাবে। প্রকল্প নির্মাণের সহসভাপতি ও পরিচালক এস জি লাস্তোচোকিন বলেন, প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে জাহাজে করে নদীপথে পদ্মায় অবস্থিত নৌবন্দরে নেওয়া হবে। চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে এ বন্দর দিয়ে প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অংশ যেমন রিঅ্যাক্টর চুল্লি পাত্র, স্টিম জেনারেটর ইত্যাদি ভারী যন্ত্রপাতি ওঠানো-নামানোর জন্য পোলার ক্রেন সরবরাহ করা হবে। পদ্মার এ বন্দর তৈরিতে সময় লেগেছে দেড় বছর। এর আয়তন ১৫০ বাই ৩৫০ মিটার।