নুরুল হক নুর, আপনাকে শুভেচ্ছা। দেশের সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আপনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা সাধারণ মানুষের মতো আমারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
‘সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে’র ব্যানার থেকে কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে আপনার আত্মপ্রকাশ। পরবর্তী সময়ে কোটা সংস্কারের দূরদর্শী কৌশল গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আমাদের ধারণা ছিল, এরপর আপনারা পড়াশোনার টেবিলে ফিরে যাবেন এবং বিসিএস গাইড স্টাডির মাধ্যমে বড় বড় আমলা হবেন। কিন্তু তা না করে সচেতন শিক্ষার প্রকাশ ভেবে রাজপথেই রয়ে গেলেন এবং ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, যা অনেকেই হচ্ছে এবং সাধারণের সাধুবাদ পাচ্ছে।
ইতোমধ্যে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করেছে; পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা তৈরিরও জোর তাগিদ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি ধর্ষণ মামলায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আদালত। অপর একটি ধর্ষণ মামলায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছে।
এরপরও ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতার আড়ালে আপনি সরকার পতনের সরাসরি হুংকার দিয়ে চলেছেন, যা জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এ যেন উড়ে এসে বিল দখলের আগ্রাসী অপচেষ্টা! এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও অপদস্থ করতে দ্বিধা করেননি।
অথচ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উইং। আগের সংগঠন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করে একই সঙ্গে সরকার পতনের এজেন্ডা দিয়েছেন। মনে হচ্ছে, এ সরকারকে উৎখাত করাই আপনার সংগঠনের একমাত্র লক্ষ্য!
যখন করোনার ছোবলে পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রসহ অধিকাংশ রাষ্ট্রের জিডিপির সূচক নিম্নগামী, তখন বাংলাদেশের সূচক উর্ধ্বগামী, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। ঠিক এরকম একটি মাহেন্দ্রক্ষণে আপনার ও আপনাদের সরকার পতনের ডাক কার্যত ষড়যন্ত্রকেই ইঙ্গিত করে। কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের জন্য এটা কোনো নীতি হতে পারে না। কারণ যে লক্ষ্যের মধ্যে মহৎ সৃষ্টিশীলতা থাকে না, তা কখনও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য নীতি বা আদর্শ হতে পারে না। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন নিংড়ে এ সত্য প্রমাণ করে গেছেন। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুমহান নীতি ও আদর্শের পরিপোষণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তার দেশ ও জাতিহিতৈষী মহান দর্শনকে অবজ্ঞা করে এ দেশে কোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক গোষ্ঠী ঐতিহাসিক সূত্রে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে না। জাতির পিতাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে এ দেশের ’৭৫-পরবর্তী প্রজন্মকে নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তরুণদের একটা অংশ সেই নষ্ট-ভ্রষ্ট ধারণায় আসক্ত। জাতীয় স্বার্থে এ জায়গাটা শুধরে দেয়া অত্যন্ত জরুরি। যতদিন তা না হবে, ততদিন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা খুব দুরূহ হয়ে পড়বে। তারুণ্যের বিশুদ্ধ শক্তিই পারে সব জরাজীর্ণতা ভেদ করে সম্প্রীতির শান্তিময় সমাজ গঠন করতে এবং সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শই হতে পারে তারুণ্যের পাথেয়। কারণ আদর্শিক নীতিবিবর্জিত লক্ষ্য, দাঁড়বিহীন নৌকার মতো অতলে হারিয়ে যায়।
যে কোনো সরকার পরিচালনায় ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। তবে সেগুলো যৌক্তিক ও গঠনমূলক বিরোধিতার মাধ্যমে শুধরাতে হবে। আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য, জাতির পিতার আদর্শপুষ্ট কোনো কার্যকর তথা সার্থক বিরোধী দল আমরা পাইনি। যদি পেতাম তাহলে এতদিনে এ দেশ স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতো। তাই কোনো সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও ইতিহাস ঘাতকদের প্ররোচণায় নয়; বরং বঙ্গবন্ধুর মানবহিতৈষী দর্শনে তারুণ্যের একটি সংগঠন গড়ে তুলুন, যারা দেশ ও জাতির মাঝে কিংবদন্তি হয়ে থাকবে।