অবশেষে বসতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে আগামী ৮ নভেম্বর এ অধিবেশন শুরু হবে। এ অধিবেশনের মূল আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর ওপর রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতা। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেবেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশি প্রতিনিধিরা না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর ওপর আলোচনাকালে বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে বিশেষ অধিবেশনের প্রস্তুতি চলছে। অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর স্মারক বক্তৃতা করবেন। এরপর সাধারণ আলোচনার জন্য কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের সদস্যদের সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। আলোচনা চলাকালে বিশেষ অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, বিদেশি কূটনীতিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং সমাজের সুধীসমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা সংসদ গ্যালারিতে উপস্থিত থাকবেন।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশনটি বিশ্ববাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশনের আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সরাসরি যাঁরা ছিলেন এমন নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের পুরোটাই যাতে আলোচনায় উঠে আসে সেদিকে খেয়াল রেখেই আলোচনা হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববাসীসহ আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে। এক বিশেষ ব্যক্তির জন্মশতবার্ষিকীতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ও তাঁকে নিয়ে আলোচনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ বঙ্গবন্ধুর ওপর আলোচনা শেষে বিল পাসসহ অধিবেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র মতে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে সংসদ অধিবেশনে দুটি বিশেষ বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসছে। ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় এই অধিবেশন শুরু হবে। শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্মারক বক্তৃতা অনুমোদন করা হয়েছে। বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর আলোচনার জন্য এরই মধ্যে সংসদ সদস্যরা প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবাদুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে সংসদে বঙ্গবন্ধু ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া গর্বের ব্যাপার। এ আলোচনা যাতে প্রাণবন্ত ও তথ্যবহুল হয়, সে জন্য সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে গত ২২ ও ২৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়। এরপর বাজেট অধিবেশনসহ তিনটি অধিবেশন বসলেও তা ছিল সংক্ষিপ্ত। অধিবেশনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়। অধিবেশনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। সংসদ সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এবারও একই নীতি অনুসরণ করা হবে। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে সংসদ সদস্যদের করোনা পরীক্ষা শুরু হবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর সাধারণ আলোচনার সময় করোনা নেগেটিভ সব সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্টসংখ্যক অতিথিও উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে বিশেষ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে স্পিকার যেখানে বসেন, তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টানানো হয়েছে। এর আগে গত আগস্ট মাসে সংসদের অধিবেশন কক্ষের উপযুক্ত জায়গায় জাতির জনকের প্রতিকৃতি মর্যাদার সঙ্গে প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বিশেষ অধিবেশনে কয়েকটি কার্যসূচি নেওয়া হবে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জারি করা অধ্যাদেশ উপস্থাপন করা হবে। অধ্যাদেশ জারির পর সংসদের প্রথম বৈঠকে তা উপস্থাপনের বিধান রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে সেটি আইনে পরিণত করতে বিল আনার বিধান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ অধিবেশনেই এসংক্রান্ত বিল পাস করাতে হবে। এ ছাড়া আরো কয়েকটি বিল পাস ও রিপোর্ট উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের কর্মসূচি কাটছাঁট হলেও বর্তমানে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি চলছে। নভেম্বরে মুজিববর্ষের ওয়েবসাইট উদ্বোধন, স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন এবং মাসব্যাপী আলোকচিত্র ও প্রামাণ্য দলিল প্রদর্শনী হবে। একটি রাষ্ট্রের জন্ম, সংবিধান প্রণয়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু যা কিছু করেছেন, তা তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সংসদে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বক্তব্যও বাজিয়ে শোনান হবে। এ ছাড়া ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি বইয়ের প্রকাশনা এবং শিশুমেলা আয়োজনসহ বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। গত ১৭ মার্চ সংসদ ভবনে আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এর আগে সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনে ২০২০ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে।