Mar 15, 2022

আম চাষিদের ঘন বাগানে ঝোঁক




চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জুড়ে প্রতি বছরই বাড়ছে আম বাগান।শুধু বদলে গেছে আম বাগানের ধরন। প্রচলিত বড় গাছের আম বাগানের স্থান দখল করছে, ছোট গাছের ঘন আমের বাগান।জেলার চাষিদের এখন আগ্রহ আম্রপালি, বারি-১১, বারি-৪, গৌড়মতি, কার্টিমন এ ৫ জাতের দিকে।এতে পুরাতন জাত ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আসিনা, গুটি এসব জাতের নতুন বাগান গড়ে উঠছে না।

জেলা কৃষি অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে আম বাগানের জমি ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩২ বিঘা। আর গত দশ বছরে জেলায় ৮৫ হাজার ৫৯১ বিঘা জমির আম বাগান বেড়েছে।এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বেড়ে উঠেছে ছোট গাছের ঘন আমের বাগান।কম সময়ে লাভবান হওয়ার আসায় চাষিরা ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আসিনা আমের পরিবর্তে লাগাচ্ছেন উচ্চ-ফলনশীল জাত।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাবি জাতের আম চাষ হয় শিবগঞ্জে। ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপরেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শামিম খান।তিনি জানান, প্রায় সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে গৌড়মতি আর আম্রপালি এ দুই জাতের আম চাষাবাদ করছি।এরমধ্যে ৪ বিঘা জমিতে লাগোনো হয়েছে ১ হাজার আম্রপালির গাছ।গাছ গুলো লাগানোর প্রায় দুই বছরের মাথায় ফল আসবে। এছাড়াও বাকি জমিতে ৫০০ টি আম্রপালির গাছ লাগানো হয়েছে।প্রায় আড়াই বছরের মাথায় আসবে ফলন।একটি গাছ থেকে আরেকটির দূরত্ব প্রায় ৬-৭ ফুট।

শামিম খান বলেন, ফজলি, আসিনা, ক্ষিরশাপাত, ন্যাংড়া আমের চাষ করে, তেমন লাভবান হওয়া যায় না। এতে করে পুঁজির টাকা পকেটে উঠাতেই হিমশিম খেতে হয়। কম সময়ে লাভবানের আশায় উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোর বাগানই বাড়ছে।গাছ ছোট হওয়ায় পরিচর্যা থেকে শুরু করে আম নামানো সহজ হয়।অন্যদিকে কম জায়গায় বেশি ফলন পাওয়া যায়।

আম চাষি সাইদুল রহমান তার জমিতে গড়ে তুলেছেন বারি-১১, বারি-৪ এ দু জাতের আম বাগান।  তিনি জানান,গত কয়েক বছর থেকে আমের দাম সে ভাবে পাইনি।কয়েক জনের মুখে শুনে এ জাতের আমের গাছ লাগিয়েছি ৪ বিঘা।আশা করছি লাভবান হবো। তিনি আরও জানালেন, প্রচলিত জাতের আম গাছ থেকে ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ৭-৮ বছর। আর উচ্চ ফলনশীল আমগাছ অধিক পরিমাণে ঘন করে লাগানো যায়। এ ছাড়া দুই বছরেই ফল পাওয়া যায়।এসব কারনেই এ ধরনের বাগানের দিকে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন আম চাষিরা।

৭ বিঘার বাগানে ৮০০ আম্রপালি আমগাছ লাগিয়েছে কৃষি উদ্যোক্তা আহসান হাবিব।তিনি গাছে রাসায়নিক সার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে পরিবেশ বান্ধব জৈব সার ব্যবহার করছে। এছাড়া আমগুলো রপ্তানীমুখী করার জন্য দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শাহীবাগ চৌধুরীপাড়ার বাগান মালিক তাজ রহমান টনি মিয়া জানান, আমার ২৬ বিঘার একটি বাগান আছে। এ বাগানে প্রচলিত জাতের আমের গাছ ছিল। বছরে মাত্র বছরে মাত্র ২ থেকে সোয়া ২ লাখ টাকা পাওয়া যেত।পরে বাগানের গাছ গুলো কেটে আম্রপালি, গৌড়মতি, কাটিমন জাতের আমের গাছ লাগানো হয়েছে।এখন নাবিজাতের আম চাষ করে  লাভোবান হচ্ছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান,গত বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আম উৎপাদন হয়েছে।বরেন্দ্র অঞ্চলে আমবাগান বাড়ছে। মূলত গৌড়মতি, যাদুভোগ, আম্রপালি, বারি-১১-সহ বিভিন্ন জাতের আমগাছ লাগাচ্ছে। আমের বাগান করলে জমির মূল্য বাড়ে, বাগানে অন্যান্য ফসল করতে পারে। এছাড়া পরিবেশও ভালো থাকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কামরুল ইসলাম জানান, জেলায় স্বল্পমেয়াদী বাগান গড়ে ওঠায় নতুন নতুন জাতগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে। বড় গাছের বাগান করলে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে ছোট গাছে ফল আসে দুই তিন বছরে।’ কৃষকরা লিজ নিয়ে অল্প সময়ে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন:

Author: verified_user

ই-মেইল: amarchapaibd@gmail.com