নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দাদন ব্যবসায়ীর
রোষানলে পড়ে পথে পথে ঘুরছে এক সবজি বিক্রেতা। ৯০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেঁসে গেছেন তিনি।
তার নামে ২৫ লক্ষ টাকার চেকের মামলাও করেছে ওই দাদন ব্যবসায়ী। কোথাও গিয়ে সেই সবজি
বিক্রেতা বিচার পাচ্ছেনা বলে জানা যায়। দাদন ব্যবসায়ীর থাবা হতে মুক্তি পাবার আশায়
সে বিভিন্ন সরকারি দফতরে আবেদন করেছেন বলে জানা যায়।
কথা হচ্ছিল
ভুক্তভোগী আজম আলীর সাথে।আজম আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার গোমস্তাপুর
ইউনিয়নের হোগলা দাঁড়াবাজ গ্রামের আতাউর রহমান ফাকুর ছেলে। আজম আলী নিজ গ্রামে কাঁচা
সবজির ব্যবসা করে সংসার চালায়। অভাবের সংসারে তার শুধুমাত্র হোগলা দাঁড়াবাজ গ্রামের
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-গোমস্তাপুর সড়কের পাশে ৮ কাঠা জমি আছে। ওই জমিতে তারা বসবাস করে এবং
রাস্তার পাশে নিজস্ব জমিতে কয়েকটা দোকান ভাড়া দিয়ে এবং নিজে সবজি ব্যবসা করে সংসার
চালায়। সেই মাটিটুকুর উপর কুনজর পড়ে একই এলাকার মোশারফের। আজমের ওই মাটিটুকু নিজের
করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকে মোশারফ।
আজম জানান-২০১৯
সালের নভেম্বর মাসে (আনুমানিক) ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে দিবে মর্মে তার কাছ হতে একই এলাকার
আব্দুল্লাহ (কেন্নান) এর ছেলে মোশারফ হোসেন ৬টি ব্যাংক চেক ও তিনশত টাকার ২ সেট স্ট্যাম্প
নেয়। সে মোতাবেক মোশারফ ১ লক্ষ টাকা ঋণের বিপরীতে ১০ হাজার টাকা জামানত রেখে আজমকে
৯০ হাজার টাকা দেয়।
সেই ঋণ আজমের
কাল হয়ে দাড়ায়। ঋণ নেয়ার ৩মাস পর (আনুমানিক) দাদন ব্যবসায়ী মোশারফ গোমস্তাপুর থানায়
আজমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করে। অভিযোগে বলা হয়, ‘আজম তার সেই জমির ৪ কাঠা বিক্রি
করবে মর্মে মোশারফের নিকট হতে ১০ লক্ষ টাকা নিয়ে একটি বায়নামা রেজিষ্ট্রি করে কিন্তু
আজম তাকে রেজিষ্ট্রি দিচ্ছেনা।’ অভিযোগের ভিত্তিতে গোমস্তাপুর থানার উপ-পরিদর্শক বজলুর
অধীনে একটি শালিস হয়। শালিসে মোশারফ যা দাবি করে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা প্রমানিত হয়।
কিন্তু দারোগা বজলু সমস্যার সমাধান করে নেয়ার জন্য উভয় পক্ষকে ৭ দিন সময় দেয়। এরই ফাঁকে
মোশারফ, আজমের ওই ৬ টি চেকের একটিতে ২৫ লক্ষ টাকা বসিয়ে আজমকে আসামী করে আদালতে মামলা
করে।
আজম বলেন,
মোশারফ তার জমিতে একটি ট্রাক্টরের শোরুম দিতে চাইলে আমি তাতে রাজি না হওয়ায় সে আমাকে
হয়রানি এবং আমার একমাত্র সম্বল জমিটুকু হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে এ কাজ করেছে।
স্থানীয় সুত্রে
জানা যায়, এলাকার সিরাজুল (৫০)এর মেয়েকে সেনাবাহিনীতে চাকুরি দেয়ার নামে নগদ তিন লক্ষ
টাকা ও তিন লক্ষ টাকার ২টি চেক নেয় মোশারফ।
মেয়ের চাকুরিতো হয়নি, উল্টো সিরাজুলকে আসামী করে সেই চেকের মামলা করেছে মোশারফ।
এলাকাবাসী
জানায়, মোশারফের অত্যাচারে গ্রামছাড়া হয়েছে অনেক যুবক। এই চেকের মামলার কারণে হোগলা
দাঁড়াবাজ গাবতলার নজরুলের ছেলে রিমন, শেখ আতাবুরের ছেলে একদিলসহ প্রায় ২০-২৫ জন পালিয়ে
বেড়াচ্ছে।
এলাকার এক
যুবক মোশারফের নিকট ঋণ না নিয়ে অন্য এনজিও হতে ঋণ নেয়ায়, তাকে গাঁজার মামলায় ফাঁসিয়ে
দেয় মর্মে জানা যায়। তার কথামত কেউ না চললে তাকে মাদকসহ পুলিশ দিয়ে হয়রানীর অভিযোগও
রয়েছে মোশারফের বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে দাদন
ব্যবসায়ী মোশারফ সাংবাদিকদের কোন বক্তব্য দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
এলাকার মেম্বার
বকুল এবিষয়ে কোন তথ্য দিবেন না বলে জানান, আপনাদের যা খুশী লিখেন।
গোমস্তাপুর
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন বলেন, মোশারফ বিভিন্ন জনের নিকট হতে ফাঁকা চেক নিয়ে
ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভুক্তভোগীরা ঋণের টাকা পরিশোধ করলেও তাদেরকে চেকের
মামলা দিয়ে অবৈধভাবে টাকা আদায় করে মোশারফ। এরকম অনেক ভুক্তভোগী এলাকা ছাড়া হয়েছে।
তিনি জানান, তাদেরকে মৌখিকভাবে এ সকল কর্মকান্ড হতে নিবৃত হবার আহবান জানালেও তারা
কর্ণপাত করছেনা।